Breaking

Tuesday, May 22, 2018

May 22, 2018

খাব্বারের(রাঃ) আকাঙ্ক্ষা


একদম প্রাথমিক পর্যায়ে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন, খাবব্বার
র্তাদের একজন। বোধ হয় ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে পঁাচ ছয় জনের
পরই তার স্থান হবে। তিনি একজন মহিলার কৃতদাস ছিলেন।
মহিলাটি ছিল নিষ্ঠুরতার জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি। যখন সে জানতে
পারলো খাব্বার ইসলাম গ্রহণ করেছে, তখন তার উপর নির্মম।
অত্যাচার শুরু হলো। অধিকাংশ সময় তাকে নগ্ন দেহে তপ্ত বালুর
উপর শুইয়ে রাখা হতো। যার ফলে তাঁর কোমরের গোশত গলে
পড়ে গিয়েছিলো। ঐ নির্দয় রমনী মাঝে মাঝে লোহা গরম করে
তার মাথায় দাগ দিত ।
অনেকদিন পর হযরত উমারের রাজত্বকালে হযরত উমার একদিন
তার উপর নির্যাতনের বিস্তৃত জানতে চাইলেন। খাব্বাব তখন
বললেন, “আমার কোমর দেখুন। হযরত উমার কোমর দেখে
আঁৎকে উঠে বললেন, ‘এমন কোমর তো কোথাও দেখিনি।”
উত্তরে খাবাব খলিফাকে জানালেন, “আমাকে জ্বলন্ত অঙ্গারের
উপর শুইয়ে চেপে ধরে রাখা হতো, ফলে আমার চর্বি ও রক্তে
আগুন নিভে যেত। "
এই নির্মম শাস্তি ভোগ করা সত্ত্বেও ইসলামের যখন শক্তি বৃদ্ধি হল।
এবং মুসলিমদের বিজয় সূচিত হলো, তখন খাব্বাব রোদন করে
বলতেন, “খোদা না করুন আমার কষ্টের পুরস্কার দুনিয়াতেই যেন
লাভ না হয় । ।”

মাত্র ৩৬ বছর বয়সে হযরত খাব্বারের মৃত্যু হয় এবং সাহাবাদের
মধ্যে সর্ব প্রথম তিনিই কুবায় কবরস্থ হন। তার মৃত্যুর পর হযরত
আলী (রা)  একদিন তাঁর কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময়
বলেছিলেন, “আল্লাহ খাব্বাবের উপর রহম করুন। তিনি নিজের
খুশিতেই মুসলিম হয়েছিলেন। নিজ খুশিতেই হিজরাত
করেছিলেন। তিনি সমস্ত জীবন জিহাদে কাটিয়ে দিয়েছিলেন এবং
অশেষ নির্যাতন ভোগ করেছিলেন।”

আমরা সেই সে জাতি ১ম খন্ড/আবুল আসাদ

May 22, 2018

আমি ঠকিনি বন্ধু !!!

মক্কার ধনী উমাইয়া । ধনে-মানে সব দিক দিয়েই কুরাইশদের
একজন প্রধান ব্যক্তি সে। প্রাচুর্যের যেমন তার শেষ নেই, ইসলাম ।
বিদ্বেষেও তার কোন জুড়ি নেই। শিশু ইসলামকে ধ্বংসের কোন
চেষ্টারই সে ক্রটি করে না। এই ঘোরতর ইসলাম বৈরী উমাইয়ারই
একজন ক্রীতদাস ইসলাম গ্রহণ করেছে। তা জানতে পারলো।
উমাইয়া। জানতে পেরে ক্রোধে ফেটে পড়লো সে। অকথ্য
নির্যাতন সে শুরু করলো। প্রহারে জর্জরিত সংজ্ঞাহীন-প্ৰায়
কৃতদাসকে সে নির্দেষ দেয়, “এখনও বলি, মুহাম্মাদের ধর্ম ত্যাগ
কর। নতুবা তোর রক্ষা নেই।”
কিন্তু তার ক্রীতদাস বিশ্বাসে অটল। শত নির্যাতন করেও তার
বিশ্বাসে বিন্দু মাত্র ফাটল ধরানো গেল না। ক্রোধে উন্মাদ হয়ে
পড়লো উমাইয়া। শাস্তির আরো কঠোরতর পথ অনুসরণ করল।
সে।
একদিনের ঘটনা। আরব মরুভূমির মধ্যাহ্ন। আগুনের মত রোদ
নামছে আকাশ থেকে। মরুভূমির বালু যেন টগবগিয়ে ফুটছে।
উমাইয়া তার ক্রীতদাসকে নির্দয়ভাবে প্রহার করলো। তারপর
তাকে সূর্যমুখী করে শুইয়ে দেয়া হলো। ভারি পাথর চাপিয়ে দেয়া
হলো বুকে । কৃতদাসের মুখে কোন অনুনয়বিনয় নেই । মনে নেই
কোন শংকা। চোথে অশ্ম নেই, মুখে কোন আর্তনাদও নেই।
উর্ধমুখী তার প্রসন্ন মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে আল্লাহর প্রশংসা
ধ্বনি- ‘আহাদ', ‘আহাদ'।

ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন হযরত আবু বকর (রা)। ‘আহাদ' ‘আহাদ'
শব্দ তাঁর কানে গেল। অনুসন্ধিৎসু হয়ে শব্দ লক্ষ্যে তিনি মরুভূমির
বুকে শায়িত ক্রীতদাসের সমীপবর্তী হলেন। উমাইয়াকে দেখে
তিনি সব ব্যাপারটাই মনে মনে বুঝে নিলেন। বললেন, “উমাইয়া,
আপনাকে তো ধনী ও বিবেচক লোক বলেই জানতাম। কিন্তু আজ
প্রমাণ পেলাম, আমার ধারণা ঠিক নয়। দাসটি যদি এতই না
পসন্দ, তাকে বিক্রি করে দিলেই পারেন। এমন নির্দয় আচরণ কি
মানুষের কাজ
হযরত আবু বকরের ঔষধে কাজ হলো । উমাইয়া বললেন, “এত
বাহাদুরী দেখাবেন না। দাস আমার এর উপর সদাচার- কদাচার
করবার অধিকার আমারই। তা যদি এতই দয়া লেগে থাকে, তবে
একে কিনে নিলেই পারেন।
হযরত আবু বকর (রা) এই সুযোগেরই অপেক্ষা করছিলেন। তিনি
চট করে রাজী হয়ে গেলেন। একজন শ্বেতাংগ ক্রীতদাস ও দশটি
স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে কিনে নিলেন কৃষ্ণাংগ ক্রীতদাসকে । হযরত আবু
বকর (রা) ক্রীতদাসকে মরুভূমির বুক থেকে টেনে তুলে গা থেকে
ধুলো ঝেড়ে দিলেন। উমাইয়া বিদ্রুপের হাসি হেসে বললেন,
কেমন বোকা তুমি বলত? এ অকৰ্মন্য ভৃত্যটাকে একটি সুবর্ণ
মুদ্রার বিনিময়েই বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলাম। এখন আমার
লাভ ও তোমার ক্ষতি দেখে হাসি সম্বরণ করতে পারছিনা ।”
আবু বকরও (রা) হেসে বললেন, “আমি ঠকিনি বন্ধু! এ
ক্রীতদাসকে কেনার জন্য আমার সমস্ত সম্পত্তি দিতে হলেও আমি
কুষ্ঠিত হতাম না। কিন্তু একে আমি ধারণাতীত সস্তা মূল্যে ক্রয়
করে নিয়ে চললাম
এ দাসটিই ছিলেন বিশ্ব বিক্রত বিলাল । ইসলামের প্রথম মুয়াযযিন।
হযরত বিলাল (রা)

Monday, May 14, 2018

May 14, 2018

প্রার্থনা / বেগম সুফিয়া কামাল

কবিতা - প্রার্থনা

লেখক - বেগম সুফিয়া কামান

তুলি দুই হাত করি মোনাজাত
হে রহিম রহমান
কত সুন্দর করিয়া ধরণী
মোদের করেছ দান,

গাছে ফুল ফল
নদী ভরা জল
পাখির কন্ঠে গান
সকলি তোমার দান৷

মাতা, পিতা, ভাই, বোন ও স্বজন
সব মানুষেরা সবাই আপন
কত মমতায় মধুর করিয়া
ভরিয়া দিয়াছ প্রাণ৷

তাই যেন মোরা তোমারে না ভলি
সরল সহজ সত্‍ পথে চলি
কত ভাল তমি, কত ভালোবাস
গেয়ে যাই এই গান৷

May 14, 2018

আনোয়ার আনোয়ার / কাজী নজরুল ইসলাম

কবিতা - আনোয়ার আনোয়ার

লেখক - কাজী নজরুল ইসলাম

স্থান – প্রহরী-বেষ্টিত অন্ধকার কারাগৃহ, কনস্ট্যান্টিনোপল।
কাল – অমাবস্যার নিশীথ রাত্রি।

চারিদিক নিস্তব্ধ নির্বাক। সেই মৌনা নিশীথিনীকে ব্যথা দিতেছিল শুধু কাফ্রি-সান্ত্রির পায়চারির বিশ্রী খটখট শব্দ। ওই জিন্দানখানায় মহাবাহু আনোয়ারের জাতীয় সৈন্যদলের সহকারী এক তরুণ সেনানী বন্দি।

তাহার কুঞ্চিত দীর্ঘ কেশ, ডাগর চোখ, সুন্দর গঠন – সমস্ত কিছুতে যেন একটা ব্যথিত-বিদ্রোহের তিক্ত ক্রন্দন ছল-ছল করিতেছিল। তরুণ প্রদীপ্ত মুখমণ্ডলে চিন্তার রেখাপাতে তাহাকে তাহার বয়স অপেক্ষা অনেকটা বেশি বয়স্ক বোধ হইতেছিল।

সেইদিনই ধামা-ধরা সরকারের কোর্ট-মার্শালের বিচারে নির্ধারিত হইয়া গিয়াছে যে পরদিন নিশিভোরে তরুণ সেনানীকে তোপের মুখে উড়াইয়া দেওয়া হইবে।

আজ হতভাগ্যের সেই মুক্তি-নিশীথ জীবনের সেই শেষরাত্রি। তাহার হাতে, পায়ে, কটিদেশে, গর্দানে মস্ত মস্ত লৌহ-শৃঙ্খল। শৃঙ্খল-ভারাতুর তরুণ সেনানী স্বপ্নে তাহার মাকে দেখিতেছিল। সহসা ‘মা’ বলিয়া চিৎকার করিয়া জাগিয়া উঠিল।

তাহার পর চারিদিকে কাতর নয়নে একবার চাহিয়া দেখিল, কোথাও কেহ নাই। শুধু হিমানী-সিক্ত বায়ু হা হা স্বরে কাঁদিয়া গেল, ‘হায় মাতৃহারা!’

স্বদেশবাসীর বিশ্বাসঘাতকতা স্মরণ করিয়া তরুণ সেনানী ব্যর্থ-রোষে নিজের বামবাহু নিজে দংশন করিয়া ক্ষত-বিক্ষত করিতে লাগিল। কারাগৃহের লৌহ-শলাকায় তাহার শৃঙ্খলিত দেহভার বারে বারে নিপতিত হইয়া কারাগৃহ কাঁপাইয়া তুলিতেছিল।

এখন তাহার অস্ত্র-গুরু আনোয়ারকে মনে পড়িল। তরুণ বন্দি চিৎকার করিয়া উঠিল – ‘আনোয়ার!’

আনোয়ার! আনোয়ার!
দিলওয়ার তুমি, জোর তলওয়ার হানো, আর
নেস্ত-ও-নাবুদ করো, মারো যত জানোয়ার!

আনোয়ার! আপশোশ!
বখতেরই সাফ দোষ,
রক্তেরই নাই ভাই আর সে যে তাপ জোশ,
ভেঙে গেছে শমশের – পড়ে আছে খাপ কোশ!
আনোয়ার! আপশোশ!

আনোয়ার! আনোয়ার!
সব যদি সুনসান, তুমি কেন কাঁদ আর?
দুনিয়াতে মুসলিম আজ পোষা জানোয়ার!
আনোয়ার! আর না! –
দিল কাঁপে কার না?
তলওয়ারে তেজ নাই! তুচ্ছ স্মার্না,
ওই কাঁপে থর থর মদিনার দ্বার না?
আনোয়ার! আর না!

আনোয়ার! আনোয়ার!
বুক ফেড়ে আমাদের কলিজাটা টানো, আর
খুন করো – খুন করো ভীরু যত জানোয়ার!
আনোয়ার! জিঞ্জির
পরা মোর খিঞ্জির
শৃঙ্খলে বাজে শোনো রোনা রিন-ঝিনকির,
নিবু-নিবু ফোয়ারা বহ্নির ফিনকির!
গর্দানে জিঞ্জির!

আনোয়ার! আনোয়ার!
দুর্বল এ গিদ্‌ধরে কেন তড়পানো আর?
জোরওয়ার শের কই?– জেরবার জানোয়ার।
আনোয়ার! মুশকিল
জাগা কঞ্জুস-দিল
ঘিরে আসে দাবানল তবু নাই হুঁশ তিল!
ভাই আজ শয়তান ভাই-এ মারে ঘুষ কিল!
আনোয়ার! মুশকিল!

আনোয়ার! আনোয়ার!
বেইমান মোরা, নাই জান আধ-খানও আর!
কোথা খোঁজ মুসলিম! – শুধু বুনো জানোয়ার!
আনোয়ার! সব শেষ!–
দেহে খুন অবশেষ! –
ঝুটা তেরি তলওয়ার ছিন লিয়া যব দেশ
আওরত সম ছি ছি ক্রন্দন-রব পেশ!!
আনোয়ার! সব শেষ!

আনোয়ার! আনোয়ার!
জনহীন এ বিয়াবানে মিছে পস্তানো আর।
আজও যারা বেঁচে আছে তারা খ্যাপা জানোয়ার।
আনোয়ার! – কেউ নাই।
হাথিয়ার? – সেও নাই!
দরিয়াও থমথম নাই তাতে ঢেউ, ছাই!
জিঞ্জির গলে আজ বেদুইন-দেও ভাই!
আনোয়ার! কেউ নাই!

আনোয়ার! আনোয়ার!
যে বলে সে মুসলিম – জিভ ধরে টানো তার!
বেইমান জানে শুধু জানটা বাঁচানো সার!
আনোয়ার! ধিক্কার!
কাঁধে ঝুলি ভিক্ষার –
তলওয়ারে শুধু যার স্বাধীনতা শিক্ষার!
যারা ছিল দুর্দম আজ তারা দিকদার
আনোয়ার! ধিক্কার!

আনোয়ার! আনোয়ার!
দুনিয়াটা খুনিয়ার, তবে কেন মান আর
রুধিরের লোহু আঁখি! – শয়তানি জান সার!
আনোয়ার! পঞ্জায়
বৃথা লোকে সমঝায়,
ব্যথাহত বিদ্রোহী-দিল নাচে ঝঞ্ঝায়,
খুন-খেকো তলওয়ার আজ শুধু রণ চায়,
আনোয়ার! পঞ্জায়!

আনোয়ার! আনোয়ার!
পাশা তুমি নাশা হও মুসলিম জানোয়ার,
ঘরে যত দুশমন, পরে কেন হান মার?
আনোয়ার! এসো ভাই!
আজ সব শেষও যাই –
ইসলামও ডুবে গেল, মুক্ত স্বদেশও নাই! –
ত্যজি বরিয়াছি ভিখারির বেশও তাই!
আনোয়ার! এসো ভাই!

সহসা কাফ্রি সান্ত্রির ভীম চ্যালেঞ্জ প্রলয়-ডম্বরু-ধ্বনির মতো হুংকার দিয়া উঠিল – ‘এ্যয় নৌজওয়ান, হুঁশিয়ার!’ অধীর ক্ষোভে তিক্তরোষে তরুণের দেহের রক্ত টগবগ করিয়া ফুটিয়া উঠিল। তাহার কটিদেশের, গর্দানের, পায়ের শৃঙ্খল খান খান হইয়া টুটিয়া গেল, শুধু হাতের শৃঙ্খল টুটিল না! সে সিংহ-শাবকের মতো গর্জন করিয়া উঠিল –

এ্যয় খোদা! এ্যয় আলি! লাও মেরি তলওয়ার!

সহসা তাহার ক্লান্ত আঁখির চাওয়ায় তুরস্কের বন্দিনী মাতৃ-মূর্তি ভাসিয়া উঠিল। সেই মাতৃ-মূর্তির পার্শ্বেই তাহার মায়েরও শৃঙ্খলিতা ভিখারিনি বেশ। তাঁহাদের দুইজনেরই চোখের কোণে দুই বিন্দু করিয়া করুণ অশ্রু। অভিমানী পুত্র অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া লইয়া কাঁদিয়া উঠিল –

ও কে? ও কে ছল আর?
না, – মা, মরা জানকে এ মিছে তরসানো আর!
আনোয়ার! আনোয়ার!

কাপুরষ প্রহরীর ভীম প্রহরণ বিনিদ্র বন্দি তরুণ সেনানীর পৃষ্ঠের উপর পড়িল। অন্ধ কারাগারে বন্ধ রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাহারই আর্ত প্রতিধ্বনি গুমরিয়া ফিরিতে লাগিল–’আঃ–আঃ–আঃ–!’

আজ নিখিল বন্দি-গৃহে ওই মাতৃ-মুক্তিকামী তরুণেরই অতৃপ্ত কাঁদন ফরিয়াদ করিয়া ফিরিতেছে। যেদিন এ ক্রন্দন থামিবে, সেদিন সে কোন্ অচিন দেশে থাকিয়া গভীর তৃপ্তির হাসি হাসিবে জানি না। তখন হয়তো হারা-মা আমার আমায় ‘তারার পানে চেয়ে চেয়ে’ ডাকিবেন। আমিও হয়তো আবার আসিব। মা কি আমায় তখন নূতন নামে ডাকিবেন? আমার প্রিয়জন কি আমায় নূতন বাহুর ডোরে বাঁধিবে? আমার চোখ জলে ভরিয়া উঠিতেছে, আর কেন যেন মনে হইতেছে, – ‘আসিবে সেদিন আসিবে।’

Tuesday, May 1, 2018

May 01, 2018

(কবিতা) শিক্ষাগুরুর মর্যাদা

কবিতার নাম - শিক্ষাগুরুর মর্যাদা -
লেখক - কাজী কাদের নেওয়াজ



একদা প্রভাতে গিয়া
দেখেন বাদশাহ- শাহজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া
ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে
পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে,
শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধুলি
ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ্ সঞ্চারি অঙ্গুলি।
শিক্ষক মৌলভী
ভাবিলেন আজি নিস্তার নাহি, যায় বুঝি তার সবি।
দিল্লীপতির পুত্রের করে
লইয়াছে পানি চরণের পরে,
স্পর্ধার কাজ হেন অপরাধ কে করেছে কোন্ কালে!
ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তার ভালে।
হঠাৎ কি ভাবি উঠি
কহিলেন, আমি ভয় করি না’ক, যায় যাবে শির টুটি,
শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার
দিল্লীর পতি সে তো কোন্ ছার,
ভয় করি না’ক, ধারি না’ক ধার, মনে আছে মোর বল,
বাদশাহ্ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।
যায় যাবে প্রাণ তাহে,
প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝাব শাহানশাহে।তার পরদিন প্রাতে
বাদশাহর দূত শিক্ষকে ডেকে নিয়ে গেল কেল্লাতে।
খাস কামরাতে যবে
শিক্ষকে ডাকি বাদশা কহেন, ”শুনুন জনাব তবে,
পুত্র আমার আপনার কাছে সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে?
বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনে অবহেলা,
নহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা স্বয়ং সকাল বেলা”
শিক্ষক কন-”জাহপানা, আমি বুঝিতে পারিনি হায়,
কি কথা বলিতে আজিকে আমায় ডেকেছেন নিরালায়?”
বাদশাহ্ কহেন, ”সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে
নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,
পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ।
নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে
ধুয়ে দিল না’ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা পাই মনে।”উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে
কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-
”আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।”

Sunday, April 29, 2018

April 29, 2018

অতএব পড়ুন, পড়ার ১১ টি কারণ -

অনেকের হবি হলো পড়া। যা হাতের কাছে পান, তাই তারা পড়েন। কেউ কেউ অবশ্য এক্ষেত্রে বাছবিচার করে পড়েন। তবে পড়েন। পাঠক হিসেবে এক এক জনের রুচি একেকরকম। এক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে বিচিত্রতা রয়েছে অনেক। বই পড়াটা অনেকের আবার নেশা ও বটে।

দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের বাঙালি সমাজে এ নেশাটা অনেক কমই দেখা যায়। ইদানিং বোধকরি পাঠকের সংখ্যাটা বাড়ছে। এটা একটা আশার কথা। পড়া নিয়ে ব্যাপক গবেষণা ও হয়েছে। তারই কয়েকটা ফলাফল নিয়ে আজকের এই লেখা।

পড়াটা কেবল সময় ক্ষেপনের জন্য নয,় বরং পড়াটা হওয়া দরকার ব্যক্তি হিসেবে আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে। ব্যক্তির আত্মিক উন্নয়ন হলে তার দ্বারা পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ও সমাজ সবাই উপকৃত হয়।

তাই একটা সুন্দর সুশীল সমাজ বিনির্মাণে আমরা সবাই কম বেশি অবদান রাখতে পারি, নিজেদের মধ্যে পাঠাভ্যাস তৈরি করে যেমনি, তেমনি নিজেদের চেনা-অচেনা আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে দুর্লভ গুণটি তৈরিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করার মাধ্যমে।

অতএব পড়ুন, পড়ার ১১ টি কারণ;

এক - বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন নিয়মিত পড়াশোনার ফলে ব্রেইন সেল বা মস্তিষ্কের কোষ বয়স বৃদ্ধি জনিত কারণে স্বাভাবিক ক্ষয় হতে বেঁচে থাকে অতএব নিদেনপক্ষে ক্ষয়ের এ প্রক্রিয়াটা ধীর গতিতে এগুতে থাকে। এর ফলে বই পাঠক "অ্যালজাইমার্স " নামক মারাত্মক রুগটি হতে বেঁচে যায় খুব সহজেই।

দুই - পরিবার,অফিস, ব্যবসা বা অন্য কোনো কাজের চাপে আপনি যখন ক্লান্ত বিরক্ত সেই রকম সময়ে পড়াতে মন দেওয়াটা কঠিন কিন্তু চেষ্টা করে আপনি কোন মতে পছন্দনীয় কোন বিষয়ে যদি পড়াশোনা শুরু করতে পারেন, দেখবেন আপনার মানসিক স্ট্রেস দূর হয়ে গেছে খুব সহজেই।

তিন - প্রতিদিন নিয়মিত একটু-আধটু পড়ুন। আপনার পছন্দনীয় বিষয়ে পড়ুন। প্রতিদিন খুব সামান্য সময় যদি পড়াশোনা করেন তাও আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়তে থাকবে। জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এই জ্ঞান আপনার কাজে লাগবেই লাগবে আর কে না জানে যে, জ্ঞানই হলো আসল শক্তি।

চার - পড়ুন। যত বেশি পড়বেন তত বেশি ভাষা ও ভাষার ব্যবহার তার প্রকাশভঙ্গি শিখবেন এর পাশাপাশি নতুন নতুন শব্দ সম্ভার আপনার স্মৃতিতে যোগ হবে আপনার অলক্ষ্যেই আপনার ভাষা সমৃদ্ধ হতে থাকবে। নতুন নতুন ভাষা শেখার ক্ষেত্রে পড়ার কোনো বিকল্প নেই।

পাঁচ - বিজ্ঞান গবেষণায় দেখা গেছে আপনি যখন পড়েছেন, তখন আপনার মস্তিষ্ক বেশি বেশি কাজ করছে মস্তিষ্কের কোষগুলো বেশি মাত্রার সচেতন ও ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। এর ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলোকে বেশি মাত্রায় রক্ত সরবরাহ হতে থাকে, কোষের বৃদ্ধি করতে থাকে। এতে আপনার মেধা বাড়তে থাকার পাশাপাশি আপনার স্মৃতিশক্তি ও বাড়তে থাকবে।

ছয় - নিয়মিত পড়াশোনার ফলে আপনার মধ্যে বিশ্লেষণধর্মী চিন্তা করার শক্তি গড়ে উঠবে, মনস্তত্ত্বের ভাষায় এটাকে "analytical thinking skill" বলা হয়ে থাকে। এর ফলে আপনার মধ্যে যে কোনো ঘটনার গভীর দৃষ্টি দেবার মত বুদ্ধিবৃত্তিক গড়ে শক্তি করতে থাকবে।

সাত - নিয়মিত পাঠাভ্যাস আপনাকে মনযোগী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। আপনাকে যে কোন কাজের পূর্বপরিকল্পনা মতো মনোযোগী হয়ে উঠার মত দূর্লভ গুনে গুনান্বিত করে তুলবে। এটা বহুল প্রমাণিত একটি বিষয়ে। যাদের নিয়মিত পাঠাভ্যাস আছে তারা পড়াশোনার বাইরে যেকোনো কাজেও লক্ষ্যস্থির পূর্বক কাজে মনোযোগী হতে পারেন।

আট - নিয়মিত পড়াশোনার কারণে আপনার ঝুলিতে যে কেবল ভাষা ও শব্দ সম্ভার যোগ হবে তাই না আপনার নিজের প্রকাশভঙ্গি ও উন্নত হবে আপনার ভেতরে লেখালেখির শক্তি ও দক্ষতা তৈরি হতে থাকবে।

নয় - মেডিকেল সাইন্সের গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় বই পত্র ও আর্টিকেল পড়ার কারণে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এমন ব্যক্তির রক্তচাপ কমে যায় মানসিক অস্থিরতা অবসাদ দূর হয় এবং মনে স্থিরতা আসে।

দশ - পড়াশোনা একটা বিনোদন। আপনার মন প্রফুল্ল থাকবে। মানসিক শান্তি পাবেন নিয়মিত পড়াশোনা করলে এবং

এগারো - নিয়মিত পড়াশোনা করাটা আপনার একান্তই কর্তব্য এ কারণে যে, পড়াশোনা একজন মুসলমানের জন্য ফরজ।

আল্লাহ এই নির্দেশটি সবার আগে দিয়েছিলেন তাঁর প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ সাঃ কে। আমাদের প্রতিও সে নির্দেশ, বলেছেন

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ
বাংলা অনুবাদঃ পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
(সূরাঃ আলাক, আয়াতঃ ১)

তাই নিয়মিত পড়াশোনা করাটা হলো একটা ইবাদত।

জ্ঞান চর্চা করা একজন মুসলমানের জন্য আজীবন আমৃত্যু ফরজ। এ ফরজ পালনার্তেই আপনি পড়বেন। অতরব, নিয়মিত পড়াশোনা করুন।

Source - book( বই খাতা কলম) লেখক- জিয়াউল হক) ইষৎ পরিমার্জিত।