অনেকের হবি হলো পড়া। যা হাতের কাছে পান, তাই তারা পড়েন। কেউ কেউ অবশ্য এক্ষেত্রে বাছবিচার করে পড়েন। তবে পড়েন। পাঠক হিসেবে এক এক জনের রুচি একেকরকম। এক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে বিচিত্রতা রয়েছে অনেক। বই পড়াটা অনেকের আবার নেশা ও বটে।
দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের বাঙালি সমাজে এ নেশাটা অনেক কমই দেখা যায়। ইদানিং বোধকরি পাঠকের সংখ্যাটা বাড়ছে। এটা একটা আশার কথা। পড়া নিয়ে ব্যাপক গবেষণা ও হয়েছে। তারই কয়েকটা ফলাফল নিয়ে আজকের এই লেখা।
পড়াটা কেবল সময় ক্ষেপনের জন্য নয,় বরং পড়াটা হওয়া দরকার ব্যক্তি হিসেবে আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে। ব্যক্তির আত্মিক উন্নয়ন হলে তার দ্বারা পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ও সমাজ সবাই উপকৃত হয়।
তাই একটা সুন্দর সুশীল সমাজ বিনির্মাণে আমরা সবাই কম বেশি অবদান রাখতে পারি, নিজেদের মধ্যে পাঠাভ্যাস তৈরি করে যেমনি, তেমনি নিজেদের চেনা-অচেনা আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে দুর্লভ গুণটি তৈরিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করার মাধ্যমে।
অতএব পড়ুন, পড়ার ১১ টি কারণ;
এক - বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন নিয়মিত পড়াশোনার ফলে ব্রেইন সেল বা মস্তিষ্কের কোষ বয়স বৃদ্ধি জনিত কারণে স্বাভাবিক ক্ষয় হতে বেঁচে থাকে অতএব নিদেনপক্ষে ক্ষয়ের এ প্রক্রিয়াটা ধীর গতিতে এগুতে থাকে। এর ফলে বই পাঠক "অ্যালজাইমার্স " নামক মারাত্মক রুগটি হতে বেঁচে যায় খুব সহজেই।
দুই - পরিবার,অফিস, ব্যবসা বা অন্য কোনো কাজের চাপে আপনি যখন ক্লান্ত বিরক্ত সেই রকম সময়ে পড়াতে মন দেওয়াটা কঠিন কিন্তু চেষ্টা করে আপনি কোন মতে পছন্দনীয় কোন বিষয়ে যদি পড়াশোনা শুরু করতে পারেন, দেখবেন আপনার মানসিক স্ট্রেস দূর হয়ে গেছে খুব সহজেই।
তিন - প্রতিদিন নিয়মিত একটু-আধটু পড়ুন। আপনার পছন্দনীয় বিষয়ে পড়ুন। প্রতিদিন খুব সামান্য সময় যদি পড়াশোনা করেন তাও আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়তে থাকবে। জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এই জ্ঞান আপনার কাজে লাগবেই লাগবে আর কে না জানে যে, জ্ঞানই হলো আসল শক্তি।
চার - পড়ুন। যত বেশি পড়বেন তত বেশি ভাষা ও ভাষার ব্যবহার তার প্রকাশভঙ্গি শিখবেন এর পাশাপাশি নতুন নতুন শব্দ সম্ভার আপনার স্মৃতিতে যোগ হবে আপনার অলক্ষ্যেই আপনার ভাষা সমৃদ্ধ হতে থাকবে। নতুন নতুন ভাষা শেখার ক্ষেত্রে পড়ার কোনো বিকল্প নেই।
পাঁচ - বিজ্ঞান গবেষণায় দেখা গেছে আপনি যখন পড়েছেন, তখন আপনার মস্তিষ্ক বেশি বেশি কাজ করছে মস্তিষ্কের কোষগুলো বেশি মাত্রার সচেতন ও ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। এর ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলোকে বেশি মাত্রায় রক্ত সরবরাহ হতে থাকে, কোষের বৃদ্ধি করতে থাকে। এতে আপনার মেধা বাড়তে থাকার পাশাপাশি আপনার স্মৃতিশক্তি ও বাড়তে থাকবে।
ছয় - নিয়মিত পড়াশোনার ফলে আপনার মধ্যে বিশ্লেষণধর্মী চিন্তা করার শক্তি গড়ে উঠবে, মনস্তত্ত্বের ভাষায় এটাকে "analytical thinking skill" বলা হয়ে থাকে। এর ফলে আপনার মধ্যে যে কোনো ঘটনার গভীর দৃষ্টি দেবার মত বুদ্ধিবৃত্তিক গড়ে শক্তি করতে থাকবে।
সাত - নিয়মিত পাঠাভ্যাস আপনাকে মনযোগী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। আপনাকে যে কোন কাজের পূর্বপরিকল্পনা মতো মনোযোগী হয়ে উঠার মত দূর্লভ গুনে গুনান্বিত করে তুলবে। এটা বহুল প্রমাণিত একটি বিষয়ে। যাদের নিয়মিত পাঠাভ্যাস আছে তারা পড়াশোনার বাইরে যেকোনো কাজেও লক্ষ্যস্থির পূর্বক কাজে মনোযোগী হতে পারেন।
আট - নিয়মিত পড়াশোনার কারণে আপনার ঝুলিতে যে কেবল ভাষা ও শব্দ সম্ভার যোগ হবে তাই না আপনার নিজের প্রকাশভঙ্গি ও উন্নত হবে আপনার ভেতরে লেখালেখির শক্তি ও দক্ষতা তৈরি হতে থাকবে।
নয় - মেডিকেল সাইন্সের গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় বই পত্র ও আর্টিকেল পড়ার কারণে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এমন ব্যক্তির রক্তচাপ কমে যায় মানসিক অস্থিরতা অবসাদ দূর হয় এবং মনে স্থিরতা আসে।
দশ - পড়াশোনা একটা বিনোদন। আপনার মন প্রফুল্ল থাকবে। মানসিক শান্তি পাবেন নিয়মিত পড়াশোনা করলে এবং
এগারো - নিয়মিত পড়াশোনা করাটা আপনার একান্তই কর্তব্য এ কারণে যে, পড়াশোনা একজন মুসলমানের জন্য ফরজ।
আল্লাহ এই নির্দেশটি সবার আগে দিয়েছিলেন তাঁর প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ সাঃ কে। আমাদের প্রতিও সে নির্দেশ, বলেছেন
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ
বাংলা অনুবাদঃ পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
(সূরাঃ আলাক, আয়াতঃ ১)
তাই নিয়মিত পড়াশোনা করাটা হলো একটা ইবাদত।
জ্ঞান চর্চা করা একজন মুসলমানের জন্য আজীবন আমৃত্যু ফরজ। এ ফরজ পালনার্তেই আপনি পড়বেন। অতরব, নিয়মিত পড়াশোনা করুন।
Source - book( বই খাতা কলম) লেখক- জিয়াউল হক) ইষৎ পরিমার্জিত।
Sunday, April 29, 2018
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
অনেক ধন্যবাদ৷
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ৷
ReplyDelete